সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও সালমান এফ রহমান গ্রেপ্তার

নিউজ ডেস্ক : বেশ কিছুদিন যাবত স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে থাকা সাবেক আইনমন্ত্রী ‘আনিসুল হক’ ও শেখ হাসিনার সাবেক অবৈতনিক উপদেষ্টা ‘সালমান এফ রহমান’ কে দেশ ত্যাগ করে পলায়নের সময় বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সহ গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) রাজধানীর সদরঘাট এলাকা থেকে নৌপথে পালানোর চেষ্টাকালে নিউমার্কেট থানায় দায়েরকৃত হত্যা মামলায় পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়েছেন বলে বিশেষ সূত্র জানিয়েছে। এসময় তাদের সাথে থাকা বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা জব্দ করা হয়। 

সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও সালমান এফ রহমান গ্রেপ্তার · ছবি: তিতাস টাইমস টুয়েন্টিফোর

বুধবার (১৪ আগস্ট) ‘আনিসুল হক’ ও ‘সালমান এফ রহমান’ কে আদালতে উপস্থিত করে পুলিশের পক্ষ থেকে হকার শাহজাহান আলী হত্যা মামলায় তাদেরকে রিমান্ডে নেওয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরা হয়। এসময় কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন চলাকালে গত ১৬ জুলাই রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় সংঘর্ষে নিহত শাহজাহানের বাবাও এই দুজনের ফাঁসি চেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। রিমান্ড আবেদন করার সময় উক্ত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও নিউমার্কেট থানার উপপরিদর্শক ‘মো. সজীব মিয়া’ বলেন, নৌপথে পালানোর সময় গতকাল (মঙ্গলবার) তল্লাশি চালিয়ে বৈদেশিক মুদ্রাসহ তাদেরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

নৌপথে পলায়নের প্রচেষ্টা: সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও সালমান এফ রহমান গ্রেপ্তার · ছবি: সংগ্রহীত

রিমান্ড আবেদনে উল্লেখ করা হয়, ‘সালমান এফ রহমান’ এর কাছ থেকে ১২টি দেশের মুদ্রা ও ‘আনিসুল হক’ এর কাছ থেকে দুটি দেশের মুদ্রা উদ্ধার করা হয়েছে।

আনিসুল হক ও সালমান এফ রহমান এর দশ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর · ছবি: তিতাস টাইমস টুয়েন্টিফোর

‘সালমান এফ রহমান’ এর কাছ থেকে উদ্ধার করা মুদ্রাগুলোর মধ্যে রয়েছে ১২ হাজার ৬২৪ ইউএস ডলার, ৬২০ সুইস ফ্রাংক, সাড়ে আট হাজার দিরহাম, ১৩ লাখ উজবেকিস্তানি সোম, ১১ হাজার ৬৫০ রিয়াল, ৭৭৯ সিঙ্গাপুরের ডলার, দেড়শ ব্রিটিশ পাউন্ড, এক হাজার ৩২১ ইউরো, ৫০ হাজার টাকা, ছয় হাজার ২৩০ ভুটানি গুলট্রাম, এক হাজার ভারতীয় রূপি, তিন হাজার ৩২০ থাইল্যান্ডের বাথ। এছাড়া ‘আনিসুল হক’ এর কাছ থেকে ১৭ হাজার ৫১২ ইউএস ডলার, ৭২৬ সিঙ্গাপুরের ডলার এবং তিনটি কূটনৈতিক পাসপোর্ট পাওয়া গিয়েছে।

এদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, পুলিশের পক্ষ থেকে রিমান্ড আবেদনের সময় আদালতে আজ (বুধবার) আনিসুল হক ও সালমান এফ রহমানের পক্ষে ছিলেন না কোনো আইনজীবী। এমনকি আত্মপক্ষ সমর্থন করে তাঁরা আদালতে কোনো বক্তব্যও দেননি। পুরোটা সময়জুড়ে ‘আনিসুল হক’ ও ‘সালমান এফ রহমান’ ছিলেন নিশ্চুপ। এদিন (১৪ আগস্ট) রিমান্ড আবেদনের পক্ষে পুলিশের যুক্তি শুনে বিচারক দুজনের ১০ দিন করে রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেন। অতঃপর তাঁদেরকে আদালতের হাজতখানায় নিয়ে যাওয়া হয়।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, কোটা সংস্কারের দাবীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি চলাকালে গত ১৬ জুলাই ঢাকা কলেজের সামনে সংঘর্ষে দুজন নিহত হন। তাঁদের একজন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী সবুজ আলী (২৬), অন্যজন হকার মো. শাহজাহান (২৬)। এ ঘটনায় নিউমার্কেট থানায় দুটি হত্যা মামলা হয়েছে। এসব হত্যার ঘটনায় ইন্ধনদাতা হিসেবে আনিসুল হক ও সালমান এফ রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

• আরো পড়ুন: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবৈতনিক উপদেষ্টা হলেন সালমান এফ রহমান

পুলিশের পক্ষ থেকে আনিসুল হক ও সালমান এফ রহমানকে হকার শাহজাহান আলী হত্যা মামলায় রিমান্ডে নেওয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরা হয়। কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন চলাকালে গত ১৬ জুলাই রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় সংঘর্ষে নিহত শাহজাহানের বাবাও এই দুজনের ফাঁসি চেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

• আরো পড়ুন: নতুন মন্ত্রিসভায় কে কোন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেলেন

গত রাতে ডিএমপির জনসংযোগ বিভাগ থেকে পাঠানো একটি খুদে বার্তায় বলা হয়, নৌপথে পালিয়ে যাওয়ার সময় গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ঢাকার সদরঘাট এলাকা থেকে আনিসুল হক ও সালমান এফ রহমানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

এর আগে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ৫ আগস্ট দেশ ছেড়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। টানা চারবার ক্ষমতায় আসার পরও ছাত্র আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করতে হয় তাকে। এরপর সরকারের মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের প্রায় সবাই আত্মগোপনে চলে যান। 

• আরো পড়ুন: সপরিবারে দেশ ত্যাগ করলেন শেখ হাসিনা

উল্লেখ্য, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সহিংসতায় রূপ নিলে জনমনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটানোর প্রবল ইচ্ছে ও আকাঙ্খা জন্মায়। একপর্যায়ে দেশজুড়ে বিরাজমান অনিয়ন্ত্রিত পরিস্থিতিতে সকার পতনের তীব্র আশঙ্কা তৈরী হলে একে একে দেশ ত্যাগ করতে শুরু করেন ক্ষমতাসীন দলের একাধিক সাবেক সংসদ সদস্য, ও মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, সহ সরকারের উচ্চপদস্থ বিভিন্ন কর্মকর্তা। অতঃপর প্রধানমন্ত্রী ‘শেখ হাসিনা’ পদত্যাগ করে দেশ ছাড়তে বাধ্য হওয়ার পূর্বেই দেশ ত্যাগ করেন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরবর্তী সময়ে গঠিত মন্ত্রীপরিষদের বেশিরভাগ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্য, ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী, বিচারপতি, আইনজীবী, সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, ভিআইপি ও সিআইপি সদস্যবৃন্দ সহ বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

এমএ/ঢাকা/বিশেষ প্রতিনিধি/তিতাস টাইমস২৪