সর্বশেষ

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ও স্মার্ট বাংলাদেশ

নিউজ ডেস্ক : গত কয়েক দশকে বিশ্বের গতিবিধিতে যদিও এসেছে নানাবিধ নাটকীয় পালাবদল। তবে বর্তমান সময়ে বয়ে যাওয়া শিল্প বিপ্লবের চতুর্থ ঢেউয়ের ফলশ্রুতিতে আমাদের চেনাজানা জীবনটা আবারও বদলের সম্মুখীন হয়েছে। এই বদলের অন্যতম প্রধান বিষয়টি হচ্ছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার গতিময় চলাচল। এনিয়ে সম্প্রতি চায়ের কাপে ঝড় তোলা বহু জল্পনা-কল্পনা ও আলোচনা-সমালোচনা উঠে আসছে।  


সম্প্রতি প্রযুক্তিবিশ্বে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে, বিশেষ করে চ্যাটজিপিটি’র ব্যবহার শুরু হওয়ার পর থেকে এনিয়ে আলোচনা যেন থামছেই না। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নিয়ে আলোচনা হলেই যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয় সেটি হলো, প্রযুক্তির এই উন্নতির কারণে বিশ্বজুড়ে অনেক মানুষ চাকরি হারাচ্ছেন এবং অদূর ভবিষ্যতে আরও অনেকেই নিজেদের চাকরি হারাতে পারেন। 


তবে সত্যিকার অর্থে বিষয়টি মোটেও এমন নয় যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা থেকে আমরা ভালো কিছু পাব না বা এটাকে আমাদের প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারব না।


• শিক্ষাক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার:-


বিশ্বব্যাপী অনেক শিক্ষার্থীই চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করে বিনামূল্যে তাদের অ্যাসাইনমেন্ট সম্পন্ন করতে পেরে আনন্দিত—যদিও এর নৈতিকতা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে সাধারণ কাজ সম্পন্ন করতে বাধা থাকা উচিত নয়।

শিক্ষায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বহুমাত্রিক ব্যবহারের অর্থ হবে এর সম্পূর্ণ কাঠামো পরিবর্তন করা। কিন্তু সঠিকভাবে যদি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার করা যায় এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যদি এর দক্ষতার উন্নতি করতে পারে, তাহলে সেটা একইভাবে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের জন্য বাড়তি সহায়ক হতে পারে।

মাল্টিপল চয়েস প্রশ্নের (এমসিকিউ) সঠিক উত্তর বেছে নেওয়ার মতো কিছু কাজে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করা যেতেই পারে। এতে শুধু সময়ই বাঁচবে না, শিক্ষার্থীরা দ্রুততম সময়ে তাদের ফলাফল পেয়ে যাবেন।

এর ব্যবহার হতে পারে শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয়তা অনুসারে কোর্স সাজাতে, তাদের দুর্বলতা চিহ্নিত করতে এবং সেই অনুযায়ী তাদেরকে মতামত জানাতে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা একটি যথাযথ সুপারিশসহ বিশদ প্রতিবেদন তৈরি করতে পারে এবং শিক্ষকের কাছে পাঠাতে পারে। এমনকি শিক্ষার্থীরাও একইভাবে নিজেদের দুর্বলতা খুঁজে নিয়ে তা কাটিয়ে উঠতে পারে।

চ্যাটবট ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। অনেক শিক্ষার্থী গুগলের বিকল্প হিসেবে এটি ব্যবহার করছে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস গাইড হিসেবে চ্যাটবট ব্যবহার করছে, যা শিক্ষার্থীদের ইনস্টিটিউটের বিস্তারিত তথ্য জানতে সহায়তা করছে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্যও বাড়তি সহায়ক হতে পারে। যেহেতু এর অ্যালগরিদম শিক্ষার্থীর দক্ষতা বিশ্লেষণ করতে পারে এবং সেই অনুযায়ী তাদের পরামর্শ দিতে পারে, তাই এটি বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীদেরকে নিজস্ব গতিতে এগিয়ে যেতে সহায়ক হতে পারে।

এই ভবিষ্যৎ প্রযুক্তিতে এগিয়ে থাকতে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি দেশ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থায় বিনিয়োগ করতে শুরু করেছে।

সিঙ্গাপুরের এআই সেন্টার ফর এডুকেশনাল টেকনোলজিস 'কোডভেরি' নামে একটি প্রোগ্রাম তৈরি করেছে, যা শিক্ষার্থীদের কোডিং অ্যাসাইনমেন্টের ভুল শনাক্ত করে এবং সেই অনুযায়ী মন্তব্য দেয়। দক্ষিণ কোরিয়া ২০২৫ সাল থেকে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক দক্ষতার ওপর ভিত্তি করে কাস্টমাইজড ডিজিটাল পাঠ্যপুস্তক তৈরির পরিকল্পনা করছে। শিক্ষায় ধারাবাহিকভাবে শীর্ষে থাকা দেশ ফিনল্যান্ডের প্রায় অর্ধেক স্কুল 'ভিআইএলএলই' ব্যবহার করে। এটি একটি শিক্ষামূলক প্ল্যাটফর্ম, যেখানে শিক্ষার্থীদের শেখার বিষয়বস্তু ছাড়াও রয়েছে একটি উন্নত এআই ইঞ্জিন, যা শিক্ষকদের সাহায্য করে শিক্ষার্থীদের প্রত্যেককে আলাদা আলাদা টাস্ক দিতে।

শিক্ষকদের উদ্বেগ রয়েছে যে শিক্ষার্থীরা অসৎ উপায়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার করতে পারে। তবে, চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করে বিভিন্ন বিষয়ে প্রবন্ধ লেখা যেমন চলছে, তেমনি টার্নিটিনের মতো অ্যাপও চলে এসেছে এগুলোকে শনাক্ত করতে। কাজেই, অসততার চেষ্টা যেমন হতেই পারে, একইভাবে সেগুলো প্রতিরোধের সক্ষমতাও তৈরি হয়ে যাবে।

শিক্ষায় অন্যান্য প্রযুক্তির মতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার রোধে নিয়ন্ত্রক কাঠামোর প্রয়োজন হবে। ইউনেস্কো ইতোমধ্যেই শিক্ষায় জেনারেটিভ এআই ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করার জন্য নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে, যা শিক্ষা নীতিনির্ধারকদের জন্য একটি সম্ভাব্য সূচনা হতে পারে।

যাইহোক, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে সত্যিকার অর্থে শিক্ষায় বিপ্লব ঘটাতে এবং প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণ ও উদ্ভাবনে আরও অনেক দূর যেতে হবে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ও স্মার্ট বাংলাদেশ
বিশ্বজুড়ে বাড়ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) প্রসার: কাজ হারানোর আশঙ্কায় বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সাররা? · ছবি: তিতাস টাইমস টুয়েন্টিফোর

• বাংলাদেশেও দিনদিন বেড়ে চলেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রসার: ফ্রিল্যান্সারদের জন্য তা সুবিধাজনক নাকী হুমকিস্বরূপ?


বাংলাদেশেও শুরু হয়েছে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার৷ এক্ষেত্রে এগিয়ে এসেছেন তরুণ উদ্যোক্তারা৷ বেসরকারি খাতে এর ব্যবহার তুলনামূলক বেশী হলেও সরকারি খাতও আধুনিক এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা থেকে দূরে নেই৷

বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ, মোবাইল ফোন আপারেটর, ব্যাংক, অনলাইন ও কৃষিখাতসহ বিভিন্ন খাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে সন্তোষজনক ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

কীভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রতিনিয়ত আমাদের লিখালিখি, কনটেন্ট নির্মাণ এবং অন্যান্য সৃজনশীল ক্ষেত্রের সাথে মিশে যাচ্ছে সেটি আমাদের মূল আলোচ্য বিষয়। যে আলোচনা ঘিরে জন্ম নিয়েছে এমন এক ভয়ের, যেখানে ভাবনায় পড়তে হচ্ছে যে - এসকল কাজের ক্ষেত্রে এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) মানুষের জায়গা নিয়ে নিবে কীনা সেই প্রসঙ্গে। 

চলমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে বলা যায়, বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সিং জগতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দাপট প্রভাব ফেলতে পারে। এর ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির কারণে বাংলাদেশে কনটেন্ট ক্রিয়েশন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, গ্রাফিক ডিজাইন, সফটওয়্যার ও এন্ড্রয়েড এপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট সহ ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের মতো বিভিন্ন ধরনের পরিষেবার একটি কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সার ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি তথা বিএফডিএসের তথ্যমতে, বর্তমানে দেশে কম করে হলেও সাড়ে ১০ লাখ সক্রিয় ফ্রিল্যান্সার রয়েছেন। তবে এই হিসেবের বাহিরে আরও অনেকেই যে রয়েছেন তা সহজেই অনুমান করে নেওয়া যায়।

পায়োনিয়ারের একটি জরিপ থেকে জানা যায়, ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মে বাংলাদেশ নিয়মিতই কর্মদাতাদের পছন্দের শীর্ষ তালিকায় থাকে। এ ছাড়া ২০১৯ সালে অনলাইন শ্রমের অষ্টম বৃহৎ উৎস ছিল বাংলাদেশ। তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগের তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সারদের মোট বার্ষিক আয়ের পরিমাণ ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশী। 

তবে বিশ্বব্যাপী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাথা চাড়া দিয়ে ওঠায় বেশ ভালোমতো ভুগতে পারে এই মিলিয়ন ডলার ইন্ডাস্ট্রি। ডাল-ই বা ও মিডজার্নির মতো ছবি তৈরি করার প্রোগ্রাম এখন ঘরে বসেই অনেককে 'আঁকিয়ে' বানিয়ে দিচ্ছে। আর চ্যাটজিপিটি তো ইতোমধ্যেই প্রয়োজনীয় প্রম্পট দেবার পর বিভিন্ন স্ক্রিপ্ট, ন্যারেটিভ এবং সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের কোড লিখে এর লেখালেখির চমক দেখিয়েছে।

প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছিল, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও অটোমেশন প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটানোর মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং ক্ষেত্রে লোকবল কমাতে সহায়ক হবে। তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্রমশ উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে দেখা গেল, এটি আরও অনেক কাজ করতে সক্ষম। বিশেষত কনটেন্ট লেখা, গ্রাফিক ডিজাইনিং, প্রোগ্রামিং, অ্যানালিসিস ও রিপোর্টিংয়ের মতো কাজগুলোতে এর অটোমেশনের পারদর্শিতা চোখের পড়ার মতো। তাই এসব কাজের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সারদের জন্য এটি বেশ বড়সড় ক্ষতি হয়ে দেখা দিতে পারে। 

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নকশাটা এমনভাবে করা হয়েছে, যাতে এর মাধ্যমে মানুষের জীবন ও কাজ আরও সহজ করা যায়। মূলত এই প্রযুক্তির উদ্দেশ্য হওয়া উচিত মানুষের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা, সেগুলোকে প্রতিস্থাপন করা নয়। যেকোনো কাজের ক্ষেত্রেই কোনো ধরনের পক্ষপাত বা ভুল এড়ানোর জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সিস্টেমগুলোকে প্রতিনিয়ত হালনাগাদ করতে হয় ও নজরদারিতে রাখতে হয়। অর্থাৎ, এই প্রযুক্তিটিরও দরকার মানুষের তত্ত্বাবধান ও পরিচালনা। ফলে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার ও বাস্তবায়নের জন্য হলেও সবসময়ই এ বিষয়ে দক্ষ ও ওয়াকিবহাল মানুষের প্রয়োজন হবে। 

যদিও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নানাবিধ সম্ভাব্য প্রয়োগ রয়েছে, তবু সব ধরনের কাজে এটি কার্যকর হবে না। বিভিন্ন ধরনের কর্মক্ষেত্র ও পেশার ওপর ভিত্তি করে শ্রমবাজারে এর প্রভাব পড়বে। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, এই প্রযুক্তিটি শুধুমাত্র কখনো কখনো সার্বজনীন সমস্যার সমাধান হতে পারে– সবসময় নয়। 

শিল্প-কারখানায় অটোমেশন এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সূচকীয় বৃদ্ধির ফলে এখন যে পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে, তাতে গণমালিকানাধীন ও ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মচারী-কর্মকর্তাদের অবশ্যই উন্নত প্রযুক্তি সম্পর্কিত বিভিন্ন শিক্ষামূলক ও প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামের আওতায় আনতে হবে। মনে রাখা জরুরি যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানুষের জন্য শুধুমাত্র সহায়ক একটি ব্যবস্থা, মানুষের বিকল্প নয়। তাই কর্মজীবী মানুষকে সব সময়ই এসব প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে, যাতে তারা কখনো পিছিয়ে না পড়ে।


• কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রস্তুতিতে পিছিয়ে বাংলাদেশ:-


বাংলাদেশে বিভিন্ন খাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) ব্যবহার শুরু হলেও বিশ্ব প্রেক্ষাপটে পিছিয়ে আছে৷ বিশ্লেষকরা বলছেন, এর জন্য দরকার রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা ও দক্ষ জনশক্তি৷

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) এআই প্রস্তুতি সূচকে ১৭৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১১৩তম৷ ডিজিটাল অবকাঠামো, মানবপুঁজি ও শ্রমবাজার নীতি, উদ্ভাবন ও অর্থনৈতিক একীকরণ, নিয়ন্ত্রণ ও নীতি- এই চারটি ভিত্তির ওপর সূচক তৈরি করা হয়েছে৷ এই সূচকে বাংলাদেশের থেকে এগিয়ে আছে ভারত, শ্রীলঙ্কা, ভুটান, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া৷ আর কেনিয়া, রুয়ান্ডা, ঘানা, সেনেগালের মতো আফ্রিকার দেশগুলোও এই সূচকে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে আছে৷ এআইয়ের প্রস্তুতির সূচকে শীর্ষে রয়েছে সিঙ্গাপুর৷

আইএমএফ বলছে এআই উৎপাদনশীলতা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও আয় বাড়াতে পারে৷ অনেক লোকের কর্মসংস্থান হতে পারে৷ তবে এটা বৈষম্যও বাড়াতে পারে, কাজও হারাতে পারেন অনেকে৷

আইএমএফের গবেষণা অনুযায়ী এআই উন্নত অর্থনীতির দেশের ৩৩ শতাংশ, উদীয়মান অর্থনীতির দেশের ২৪ শতাংশ ও নিম্ন আয়ের দেশে ১৮ শতাংশ চাকরিকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে৷ অন্যদিকে এআই বিদ্যমান চাকরির উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে ব্যাপক সম্ভাবনা নিয়ে আসছে৷

এদিকে আমাদের দেশে প্রতিবছর ২০ লক্ষেরও অধিক মানুষ শ্রমবাজারে প্রবেশ করে। অধিক জনসংখ্যার কারণে এই দেশের চাকরি পাওয়াটা সোনার হরিণের সাথে তুলনা করা হয়। একদিকে আমাদের তরুণেরা চাকরি পাচ্ছে না আবার অন্য দিকে আমাদের দেশে বিদেশী শ্রমিকের সংখ্যা ১২ লক্ষ। এর প্রধান কারণ আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে চাকরির বাজেরের কোন মিল নেই। যার কারণে আমাদের প্রকৃত বেকার সংখ্যা ৪ কোটিরও অধিক। এত বড় বিরাট বেকারত্বের মধ্যে, সারা পৃথিবীতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আগমনের ফলে স্বাভাবিক ভাবে আমাদের দেশের জন্য আর একটি বড় অশুভ সংবাদ।

প্রথমত বলা যায়, আমাদের দেশের মানুষের প্রযুক্তির সাথে অনেকটা নতুন করেই পরিচিত হচ্ছে। ২০১০ এর পর থেকে খুবই স্বল্প আকারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি নামের বিষয় দিয়ে এর পাঠ্য চর্চা শুরু হয়। প্রথমত এই বিষয়টি এখন শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যার মতো করেই গেলার চেষ্টা করছে। যার ফলে সরকার যে লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এগুচ্ছে তা কতখানি পুরণ হবে, তা সংশয়ে রয়েছে। আবার উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে এসে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর এই বিষয়টির সাথে সম্পৃক্ততা নেই। কারণ বাংলাদেশের সবগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই বিষয়টি পড়ানো হয়না। আবার সরকারি চাকরি পাওয়ার খায়েশে কম্পিউটার প্রযুক্তিতে পড়া শিক্ষার্থী এখন বাংলা, ইংরেজি এবং সাধারণ জ্ঞান আয়ত্ত করে সোনার হরিণের স্বপ্ন দেখছে।

অথচ আগামী দিনের প্রযুক্তি বিদ্যা কিংবা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সমস্যাকে সরকারের কৌশলি ভূমাকায় বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক বিশ্বে প্রযুক্তির বাজারে নেতৃত্ব দেওয়া এবং বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় নেতৃত্বের অবস্থানে পৌছাতে পারে। প্রথমত বলা যায়, আমাদের প্রাথমিক শিক্ষার শুরুতেই প্রযুক্তির ব্যবহারিক প্রয়োগের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে পড়ার সময় পাঠ্যপুস্তুকের মুখস্থ বিদ্যা থেকে বের করে শিক্ষার্থীদের বাধ্যতামূলক ব্যবহারিক শিক্ষা ব্যবস্থাসহ প্রযুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন প্রতিযোগিতার অংশ নেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। যার জন্য শিক্ষা ব্যবস্থায় কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে বাদ দিয়ে আইসিটিকে পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভূক্ত করতে হবে।

উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে এই শিক্ষা হতে হবে, বিশ্ব প্রতিযোগিতার সামিল হওয়ার মতো। প্রতিটি বিষয়ের স্নাতক শিক্ষার পাশাপাশি এই শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে। বাংলাদেশের চাকরির বাজারের পড়াশুনায় এই বিষয়টি অনেকটাই অবহেলিত। সেইক্ষেত্রে মূল পরীক্ষার সাথে এই বিষয়টির ব্যবহারিক পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হলে একজন শিক্ষার্থী তার প্রয়োজনে কিংবা বাধ্য হয়ে প্রযুক্তির জ্ঞান অর্জনে বাধ্য থাকবে। যা আমাদেরকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দেশের বাজারে পাশাপাশি বৈশ্বিক বাজারে প্রবেশের সুযোগ করে দিবে।

যদিও এআই টেকনোলজি ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের সুবিধা যেমন আছে তেমনি নানান ঝুঁকিও রয়েছে৷ সেটা অবশ্য নির্ভর করে মানুষের ওপর৷ আমরা কীভাবে ব্যবহার করতে চাই৷ এটা ক্ষতিকর কাজেও ব্যবহার করা যায়৷।

তবে ভার্চুয়াল জগৎ এখন মানব সংস্কৃতির অংশ। যদিও আমাদের ডিজিটাল সংস্কৃতিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশের অভিজ্ঞতায় সাধারণভাবে সরকারি দু’একটা ফর্ম ডাউনলোড করা, অডিও ও ভিডিও কল করা, ফেসবুকের ব্যবহার, প্রকাশনা, ওয়েবসাইট তৈরি ইত্যাদি ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যবসা ও বাণিজ্যের প্রচার ও প্রসারের জন্য ফেসবুক-সহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের ব্যবহার ও ই-কমার্সের কিছুটা হলেও প্রচলন শুরু হয়েছে। এই সীমিত চর্চার মধ্যেও আবার নেতিবাচক চর্চার দৃষ্টান্ত যথেষ্ট। যার মধ্যে আছে অনলাইন গুজব ছড়ানো, ব্যক্তিগত তথ্য চুরি ও ছড়িয়ে দেওয়া, অন্যকে হেনস্তা করা ও ট্রল এবং পর্নগ্রাফি ইত্যাদি।

এদিকে আমরা এখন বিশ্বায়নের যুগে বসবাস করছি, এই যুগে প্রযুক্তি যেভাবে সংস্কৃতিকে প্রভাবিত করছে তা নিয়ে কোনো ভবিষ্যদ্বাণীই যেন কাজে লাগছে না। ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েভ এখন শুধু তরঙ্গের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই এর সঙ্গে এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সমন্বয় ঘটেছে, আর ভবিষ্যতে আর কী কী অপেক্ষা করছে তা বলা দুরূহ। বিশ্বায়নের কালে বিশ্বে ক্ষমতার কেন্দ্রিকতা নির্ভর করে বিশ্বপ্রযুক্তির ওপর কার কতটুকু নিয়ন্ত্রণ আছে তার ওপর।

এমতাবস্থায় বিশ্বে আমাদের অবস্থান তৈরি নির্ভর করে নতুন নতুন প্রযুক্তি এবং এ সম্পর্কিত ইকোসিস্টেমে আমরা কতটুকু অভ্যস্ত হয়ে উঠতে পারছি তার ওপর। অধিকন্তু শুধু অভ্যস্ত হলেই হবে না এর পাশাপাশি এই প্রযুক্তির ওপর কতটুকু নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা ও অন্যের নির্ভরশীলতা তৈরি করতে পেরেছি তার ওপর। ডিজিটাল বাংলাদেশের পর দেশকে এখন আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে তৈরি করতে চাই, আর এই স্মার্ট দেশ তৈরিতে স্মার্ট সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত হওয়ার কোনো বিকল্প নেই।


লিখেছেনএএইচ মোনাইম (আইটি ইঞ্জিনিয়ার, উদ্যোক্তা, ও কলামিস্ট)


#TitasTimes24 #ahmonayem #technews

#AI #Bangladesh #trendingnow #techupdate

Main Ad

এএইচএম/নিউজ ডেস্ক/তিতাস টাইমস২৪

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

© TitasTimes24 All Rights Reserved

class='remove-footer'>